নিজস্ব প্রতিবেদক
কাউন্সিলরের নির্দিষ্ট এলাকা অনুযায়ী ও তাদের তালিকা অনুসারে কাজ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধন কর্মীরা। তবে কাউন্সিলরা শুধু মাত্র নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের আসার অপেক্ষা করেন মশা নিধন করার জন্য। কিন্তু কাউন্সিলরদের নিজ এলাকায় ব্যক্তিগত ভাবে কোন ধরনের উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত প্রতিটি ওয়ার্ডে মশার উপদ্রবের কারণে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে। দিন দিন বেড়ে চলছে এ সমস্যা। তবে নগরীর মশার উপদ্রব বৃদ্ধির কারণ শুধু সিটি এলাকা নয় ইউনিয়ন এলাকাও। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ওয়ার্ড ভিত্তিক ১ জন করে ২৭ জন কাউন্সিলর রয়েছে। এ সকল কাউন্সিলরদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসায়ী। অর্থনৈতিক ভাবে কাউন্সিলরদের গ্রহণ যোগ্যতাও অনেক। সচেতন নগরবাসী মনে করেন, যদি প্রতিটি কাউন্সিলর একটি করে মশক নিধন যন্ত্র নিজ উদ্যোগে ক্রয় করে মশা নিধন করার ব্যবস্থা করতো তাহলে মশা অনেকটাই কমে আসতো। শুধু মাত্র ২০ জন কর্মী দিয়ে নারায়ণগঞ্জ, সিদ্বিরগঞ্জ, বন্দরসহ ২৭ টি ওয়ার্ডে মশার ঔষধ স্প্রে করতে পাঠায় এলাকাগুলোতে। প্রতিটি উপজেলায় ৬ জন করে টিম হয়ে কাজ করে মাসে ২৭ দিন। ৬ জন কর্মী দিয়ে উপজেলার মশা নিধন করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন এলাকাবাসী। তাই সকল কাউন্সিলররা উদ্যোগ গ্রহন করলে মশার কামড়ের যন্ত্রনা কমে আসবে।
১৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা গোলাম পারভেজ বলেন, জনগনের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জনগণে সমস্যার কথা না ভেবে নিজের স্বার্থ আছে সে সকল কাজগুলোতে তা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আমরা মশার কামড়ে জরাজীর্ণ হয়ে যাচ্ছি কিন্তু তারা কোন ধরনের নিজ উদ্যোগ না নিয়ে শুধু মাত্র সিটি কর্পোরেশনের আশায় বসে থাকে। আমরা চাই কাউন্সিলররা মশা নিধন করতে কিছু নিজ উদ্যোগ গ্রহণ করুক।
অপরদিকে ২৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইমরান মেহেদী বলেন, ভোট নিতে আসে, কিন্তু দূর্ভোগের সময় কেউ নেই পাশে। বর্তমানে মশা অত্যান্ত বড় একটি সমস্যা। কিন্তু এ সমস্যা নিধন করার জন্য স্থানীয় কাউন্সিলররা ব্যক্তিগত ভাবে কোন ধরনের কাজ করে না। যদি কাউন্সিলররা নিজ উদ্যোগে একটি করে মশা মারার যন্ত্র দিয়ে এলাকায় মশা নিধনের ব্যবস্থ্ াকরতো তাহলে এতো সমস্যা হতো না।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মতিউর রহমান জানান, তিনি নিজ উদ্যোগে ২টি মেশিন দিয়ে তার এলাকাতে মশা নিধনের ব্যবস্থা করেছেন। তবে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা এখনো যায়নি তার এলাকায় বলে তিনি জানান।
এছাড়া সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মিনোয়ারা বেগম বলেন, মশার মেশিন ও ঔষধ রাখার জায়গা স্বল্পতার কারণে আমরা উদ্যাগে নিতে পারি নাই। তবে, বর্তমানে সিটি এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে আমরা ব্যাক্তিগত ভাবে উদ্যোগ নিবো ।
এছাড়া সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আফসানা আফরোজ বিভা জানায়, ব্যক্তিগত ভাবে যদি জণগন চায় তাহলে সিটি কর্পোরেশনের বিশেষ টিমের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হয়। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত সামনের সভায় মেয়রের সাথে আলোচনা করে বলতে পারবো।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আলমগীর হিরন জানান, আমদের জানা নেই যে কোন কাউন্সিলর নিজ উদ্যোগে মশা নিধনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তবে কয়েকজন কাউন্সিলর নিজস্ব হ্যান্ড মেশিন দিয়ে মশা নিধনের জন্য আমাদের কাছে ঔষধ চেয়েছেন। কিন্তু তাদের কারো ফগ মেশিন নেই। এছাড়া আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে আলাদা ভাবে কর্মসূচি গ্রহন করেছি।
উল্লেখ্য, আমেরিকান মসকিউটো কন্ট্রোল এসোসিয়েশনের (এএমসিএ)’র এক তথ্যে দেখা যায় যে, মশার কারণে প্রতি বছর সারা বিশ্বে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ১০ লক্ষের অধিক মানুষ মারা যায়।
মশার কামড়ে ১২ ধরনের ভয়ংকর রোগ সৃষ্টি হয়। জিকা, চিকুন গুনিয়া, ডেঙ্গু, ভেনিজুয়েলা ইকুয়িন এনসেফালাইটিস, ইস্টার্ন ইকুয়িন এনসেফালাইটিস, লা ক্রস এনসেফালাইটিস, জাপানি এনসেফালাইটিস, ইয়োলো ফিভার, লিম ফেটিকফাই লেরিয়াসিস সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে বলে জানা গেছে। আর এ সকল রোগের ঝুকিতে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ।